প্রযুক্তির কল্যাণে মোবাইল ফোন এখন সবার হাতে হাতে। বর্তমানে শিশুদের মধ্যে মোবাইল ফোন আসক্তির মাত্রা আশংকাজনক হারে বেড়ে চলেছে। ফলে শিশুদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা।
বিভিন্ন গবেষক এবং বিশেষজ্ঞদের মতে শিশুদের মধ্যে এই মোবাইল ফোন আসক্তির মাত্রা এতোটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, মোবাইল ফোন ছাড়া বাচ্চারা খেতে চায় না, ফোন নিয়ে নেওয়া হলে তারা রেগে যায় এবং নেতিবাচক আচরণ শুরু করেন। এই করোনাকালে লক ডাউনে এর হার আরও বেড়ে গিয়েছে। স্কুল কলেজ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এবং সারাদিন বাসায় থাকার ফলে শিশুরা মোবাইল ফোন, বিভিন্ন ভিডিও গেমস এবং ইউটিউবে আসক্ত হয়ে পরেছেন। এর ফল স্বরূপ শিশুদের নানাধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে যেমনঃ দীর্ঘক্ষণ মোবাইল ফোনে তাকিয়ে থাকার ফলে মাথা ব্যথা, চোখে ব্যথাসহ আরও নানা ধরনের মানসিক সমস্যাও দেখা দিচ্ছে। ২ থেকে ৫ বছরের শিশুদের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। এই বয়সি শিশুদের অভিভাবকরা ডাক্তারদের কাছে অভিযোগ করছেন যে, তাদের শিশুরা উপযুক্ত বয়স হওয়া সত্ত্বেও কথা বলছেন না, বা দেরিতে কথা বলছেন।
এই আসক্তির পিছনে মূল কারণটি কি?
গ্রামের তুলনায় শহরের শিশুদের মধ্যে মোবাইল আসক্তির সংখ্যা বেশি। এর কারণ হল, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থা। শহরে সাধারণত বাবা-মা দুজনই চাকুরীজীবী হয়, ফলে তারা সন্তানদের পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেন না, মোবাইল ফোন বা ভিডিও গেমস দিয়ে রাখেন। ফলে শিশুরা মোবাইল ফোন, ট্যাব এর দিকে ঝুঁকছে। এছাড়া ঢাকা শহরে শিশুদের খেলার মাঠ বা খোলা যায়গা নেই। থাকলেও নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে অভিভাবকরা বাইরে যেতে দিতে চান না। ঘরে বসে টিভি দেখা, গেমস অথবা মোবাইলে কার্টুন দেখাকেই শ্রেয় মনে করেন। আবার অনেক সময় বাচ্চারা দুষ্টুমি করলে শান্ত করার জন্য অভিভাবকরা মোবাইল ফোন দেখতে দেন। এভাবেই ধীরে ধীরে শিশুরা মোবাইল ফোনে আসক্ত হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে এ সকল পরিস্থিতির পিছনে মূল কারণ হচ্ছে অভিভাবকদের উদাসীনতা। আজকাল পিতামাতারা এতোটাই প্রযুক্তি নির্ভর হয়েছেন যে, বাচ্চারা কান্না করলে অথবা খেতে না চাইলে তারা মোবাইল ফোনের ব্যবহার করে। মোবাইল ফোনে কার্টুন বা ইউটিউবে ভিডিও দেখিয়ে খাওয়ানোর বা কান্না থামানোর চেষ্টা করেন। ফলে এটি শিশুদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে তা আসক্তিতে রুপ দেয়।
এই মোবাইল ফোন আসক্তির ফলে শিশুদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। শিশুরা বদমেজাজি এবং খিটমিটে হয়ে যাচ্ছেন, ধৈর্য এবং মনোযোগ কমে যাচ্ছে। পড়ালেখায়ও ব্যাঘাত ঘটছে। অনেক সময় অতিরিক্ত মোবাইল ফোন দেখার ফলে শিশুদের পর্যাপ্ত ঘুম হয় না, আর পর্যাপ্ত ঘুম না হলে ব্রেইন ডেভেলপমেন্টে সমস্যা হয়। অল্প বয়সেই শিশুদের চোখের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে শিশুরা উপযুক্ত বয়সের আগেই অনেক অনৈতিক এবং আপত্তিকর বিষয় জানতে পারছে, ফলে এটি তাদের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
শিশুদের মোবাইল আসক্তি থেকে মুক্ত করতে হলে অভিভাবকদের অনেক সচেতন হতে হবে। শিশুদেরকে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে, শিশুকে খাওয়ানো বা কান্না থামানোর জন্য কোন ভাবেই মোবাইল ফোন দেওয়া যাবে না। এছাড়াও পারিবারিক এবং সামাজিক সংযোগ বৃদ্ধি করতে হবে যাতে আপনার শিশুটি অন্য বাচ্চাদের সাথে মেশার বা খেলার সুযোগ পায়। শিশুদের উপযুক্ত বয়সের আগে মোবাইল ফোন দেওয়া উচিত না। যদি একান্তই দিতে হয় তাহলে নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে দিন যাতে এই সময়ের অধিক সময় ধরে তারা মোবাইল ফোন ব্যবহার না করে। আপনার শিশুটি মোবাইলে বা ইন্টারনেটে কি দেখছে সেটি লক্ষ্য রাখুন। শিশুদের বই পড়ার, খেলাধুলা করার দিকে উৎসাহিত করুন, যাতে করে তারা মোবাইল ফোন বা ইন্টারনেট দেখার প্রয়োজন বোধ না করে। শিশুদের উপযুক্ত বয়স হওয়ার আগেই বিলাসিতা স্বরূপ মোবাইল ফোন বা ট্যাব কিনে দিবেন না। শিশুকে সময় দিন, মাঝে মধ্যে খোলামেলা জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যান, মোবাইল ফোন আসক্তি অনেকটাই কমে যাবে।